বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক হারে শুল্ক আরোপ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সোমবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে তিনদিনের আলোচনা শেষে দেশে ফিরে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আলোচনাগুলো অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও ইতিবাচক ছিল। তিনি বলেন, “তিনদিন ধরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছি। নানা পরামর্শ পেয়েছি, যেগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ আলোচনায় কাজে লাগবে।”
তবে আলোচনার বিস্তারিত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “অনেক বিষয় এখনই প্রকাশযোগ্য নয়। নন-ডিসক্লোজার চুক্তির আওতায় এসব বিষয় গোপন রাখতে হচ্ছে।”
সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের ‘যৌক্তিক শুল্ক’ বলতে কী বোঝায় জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তাদের স্পষ্টভাবে বলেছি—শুল্ক Ideally `শূন্য` হলে ভালো হয়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে আমরা নিয়মিত শুল্ক পরিশোধ করছি। বৈষম্যমূলক শুল্ক চাপিয়ে দিলে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিরুৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত দিচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখন মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”
তিনি জানান, তিনদিনের দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর দেশে ফিরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আগামী সপ্তাহে তৃতীয় দফা বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা চাই বড় কোনো শুল্কের ধাক্কা যেন না আসে। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছি।”
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এরপর দু’দফায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ দ্বিতীয় দফার বৈঠক ৯-১১ জুলাই পর্যন্ত চলে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আগে দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ পারস্পরিক শুল্ক সমঝোতা (রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট) বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, আরপিআইডির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এছাড়া এফবিসিসিআই, বিকেএমইএ, ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিসিআই, এলএফএমইএবি-সহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেন।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আগে হয়তো হতাশা ছিল। এখন আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :