ঢাকা সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

তাড়াশে এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিস নিষ্ক্রিয়, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

কালের সমাজ | জলিলুর রহমান জনি সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ২১, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম তাড়াশে এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিস নিষ্ক্রিয়, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এসিল্যান্ড নাই সা‌ড়ে চার মাস, ১২শ নামজারি, ২৫০ মিসকেস ফাইলবন্দি হ‌য়ে প‌ড়ে আছে সা‌ড়ে চার মাস ধ‌রে। জানা গেছে, মার্চ মাস থেকে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড পদ শূন্য আছে। এতে পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব বর্তায় ইউএনওর ওপর। গত চার মাসের ব্যবধানে ইউএনও পদে দুজন কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। এতে ভূমি অফিসের নামজারি, মিসকেসসহ নানা ধরনের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।
কর্মকর্তা না থাকায় গত  চার মাসে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় ১২০০ নামজারি, ২৫০ মিসকেস আবেদন ফাইলবন্দি অবস্থায় আছে বলে ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে। এতে সেবা নিতে আসা মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন |
ভুক্তভোগী এ নারীর ভাষ্য, তাঁর বাবার বাড়ি তাড়াশে, তাঁর বিয়ে হয়েছে রায়গঞ্জ। বাবার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি নামজারি করতে একবার তাড়াশ, একবার রায়গঞ্জ- এভাবে এক মাসে তিন বার আসা-যাওয়া করলেও কাজটি শেষ হয়নি। এতে দুই বোন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, তাদের যাতায়াতে বাড়তি খরচও হচ্ছে। তাড়াশ উপজেলার সরাপপুর এলাকার মাহিয়া খাতুন ও রায়গঞ্জের রৌহাদহ গ্রামের সুমনা খাতুন  দুই বোন। তারা পৈতক সূত্রে পাওয়া জমি নামজারির জন্য আবেদন করেছেন এক মাস আগে। তাদের কাজ এক মাসেও শেষ হয়নি। নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার ভায়াট মৌজার ফসলি জমির নামজারির জন্য আবেদন করেন ইউনুস  মোল্লা, রাকিব মোল্লা ও তাদের স্বজন। তাদের জমিরও দেড় মাসেও নামজারি হয়নি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ২২ কর্মদিবসে এটি নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। নামজারি, মিসকেস ফাইলবন্দি থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বিপদে পড়েছেন। নামজারি করে জমি বিক্রি করে পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর মতো কাজও কর‌তে পার‌ছেন না তারা।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নামজারির পাশাপাশি ভূমি মালিকদের  ২৫০ মিসকেস নিষ্পত্তিহীন বা ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। এসবের শুনানি, পরবর্তী তারিখ, নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব সহকারী কমিশনারের (ভূমি)। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ হাসান জুন মাসে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেলে পদটি শূন্য হয়। তখন ইউএনও সুইচিং মং মারমা অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। তিনিও জুলাই মাসে বদলি হয়ে চলে যান। এরপর ইউএনও মো. নুরুল ইসলাম যোগদান করেন। তিনি ভূমি কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কিছু কাজও করেন। তিনিও বদলি হয়ে যান। এতে নামজারি ও মিসকেস নিষ্পত্তিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। ভূমি অফিস থেকে আরও  জানা যায়, নিয়মিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকলে প্রতি মাসে ৪০০-এর অধিক নামজারি ও ৬০ থেকে ৭০টি মিসকেস নিষ্পত্তি হয়। তা নিয়মিত না হওয়ায় ফাইলের স্তূপ জমেছে ভূমি অফিসে।
বারুহাস ইউনিয়‌নের রানী‌দিঘী গ্রা‌মের মুস্তাক আহমেদ  এর একটি ভূমিসংক্রান্ত মিসকেস চার মাসে তিনটি তারিখ নির্ধারণ হলেও কর্মকর্তার অভাবে শুনানি হয়নি। তিনি বলেন, ‍‍`এ অবস্থা শুধু আমার নয়। ভূমিসংক্রান্ত নানা কাজে সহকারী কমিশনার না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার শত শত মানুষ।
উপ‌জেলা নির্বাহী অ‌ফিসার (ইউএনও) কে নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উপ‌জেলা প‌রিষদ, পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত কাজও সামলাতে হচ্ছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দায়িত্ব থাকায় সব কাজ তাঁর পক্ষে সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। এ কারণে নিয়মিত সহকারী কমিশার (ভূমি) পদায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
উপ‌জেলা নির্বাহী অ‌ফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ‍‍`সহকারী কমিশনার না থাকায় ভূমি সংক্রান্ত কাজে ধীরগতি আছে। আমাকে পৌরসভার প্রশাসকসহ একসঙ্গে কয়েকটি পদের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। তারপরও ভূমি অফিসের কাজের গতি আনার চেষ্টা চলছে। এখানে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পদায়ন হলে ভালো হতো।‍‍`
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন হলো তাড়াশ উপজেলায় নতুন ইউএনও যোগদান করেছেন। তাঁকে নামজারি, মিসকেসসহ অগ্রাধিকারমূলক কাজ দ্রুত নিষ্পত্তির কথা বলে দেবেন তিনি |

 

কালের সমাজ/হাকা

Side banner
Link copied!