বান্দরবানের লামা পৌরসভায় টানা ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়েছে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধুঝিরি এলাকাসহ আশপাশের অন্তত ৬০টি পরিবার এক সপ্তাহ ধরে ৩-৫ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গত ২৮ মে রাতের ভারী বৃষ্টিতে মধুঝিরির একটি গুরুত্বপূর্ণ চলাচলের রাস্তা ভেঙে পড়ে এবং রাস্তার পাশে ঝিরির বড় গাইড ওয়াল ধসে যায়। এ ঘটনায় শতাধিক পরিবার চরম ভোগান্তির মুখে পড়ে। পৌরসভায় সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে।
জলাবদ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেন লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. মঈন উদ্দিন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাস্তা ও ড্রেনের জায়গা দখল করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব নির্মাণকাজের কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, যা বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জসিম উদ্দিন ও জাকের হোসেনসহ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তারা হামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রকল্প ডিজাইন করার জন্য পৌর প্রকৌশল বিভাগকে দায়ী করেছেন তারা। এতে সরকারি অর্থের অপচয় এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে বলে অভিযোগ তাদের।
অন্যদিকে, পৌরসভার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দে নির্মাণাধীন একটি মাস্টার ড্রেনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় মৃত আমির হোসেনের পরিবার। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে পাশের রাস্তাও ভেঙে গেছে। এমনকি একটি কবরস্থান ও ঝিরির পানি ব্যবহারের সিঁড়ি-ঘাটলারও ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পৌরসভার এক প্রভাবশালী নেতা রফিকের স্ত্রী ও শ্বশুরের পরিবারের বাধার কারণেই মাস্টার ড্রেনের কাজ থেমে আছে। এ বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর রফিক বলেন, “আমার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, শুধু কাজের সুবিধার্থে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম।”
পরিদর্শনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “সরকারি অর্থায়নে উন্নয়ন কাজে ব্যক্তির অযৌক্তিক বাধা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
তিনি আরও জানান, বর্ষণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে থাকতে সতর্ক করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কালের সমাজ//এসং//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :