আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হওয়া ভিআইপি পর্যায়ের ২ শতাধিক আসামির মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা ৫৯ জনকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষভাবে প্রস্তুত এক কারাগারে রাখা হয়েছে। এদের অধিকাংশই সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা ও হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব ভিআইপি আসামির বিরুদ্ধে সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণা। একাধিক ঘটনায় আদালত চত্বরে এমন আসামিদের বিরুদ্ধে জনরোষ প্রকাশ পেয়েছে, ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনাও। এই প্রেক্ষাপটে কারা প্রশাসন নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় তালিকাভুক্ত ৫৯ জনকে বিশেষ কারাগারে স্থানান্তর করে।
২১ জুন চালু হওয়া এই বিশেষ কারাগারটি আগে নারী কয়েদিদের জন্য ছিল, যা পরবর্তীতে সংস্কার করে পুরুষ ভিআইপি আসামিদের রাখার উপযোগী করা হয়। এখানে বর্তমানে ৫৬ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় ডিভিশন না পাওয়া ৩ জন সাবেক এমপিকে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনাইদ আহমেদ পলক, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, ফরহাদ হোসেনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রয়েছেন।
বিশেষ কারাগারে দায়িত্ব পালনে দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে চৌকস ও নিরপেক্ষ কারারক্ষী বাছাই করে আনা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম বা পক্ষপাতের অভিযোগ নেই, তারাই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে কয়েদি রয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার এবং কাশিমপুর কারাগারে সাড়ে সাত হাজার। পুরো দেশে কয়েদির সংখ্যা ৭৭ হাজার ৮০৩ জন, এর মধ্যে নারী ২ হাজার ৭৩২।
নারী ভিআইপি আসামিদের মধ্যে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, মাসুদা সিদ্দিক রোজী, সাফিয়া খাতুন ও আইভি রহমান। তবে আলোচিত ব্যক্তিত্ব অভিনেত্রী শমী কায়সার ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা ডিভিশন না পাওয়ায় সাধারণ কয়েদিদের মতোই বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, “এই ভিআইপি আসামিদের প্রতি সাধারণ মানুষ ও কয়েদিদের ঘৃণা অস্বাভাবিক নয়। কারণ তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। তবে রাষ্ট্র সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। আইনের মাধ্যমে সঠিক বিচারই হবে সবচেয়ে বড় প্রতিকার।”
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও ভিআইপি আসামিকে এই বিশেষ কারাগারে স্থানান্তর করা হতে পারে। বর্তমানে যারা বাইরে রয়েছেন, তাদের মধ্যেও অনেকে ডিভিশনপ্রাপ্ত হলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলনামূলক কম হওয়ায় সাধারণ কারাগারে রাখা হয়েছে।
বিশেষ কারাগারে থাকা কিছু আলোচিত আসামি—
সালমান এফ রহমান
আনিসুল হক
হাসানুল হক ইনু
রাশেদ খান মেনন
জুনাইদ আহমেদ পলক
আমির হোসেন আমু
আব্দুর রাজ্জাক
কামরুল ইসলাম
আতিকুল ইসলাম
ফরহাদ হোসেন
টিপু মুনশি
শাহজাহান খান
সাধন চন্দ্র মজুমদার
আবুল কালাম আজাদ
আব্দুর রহমান বদি (ডিভিশনহীন)
সোলাইমান সেলিম (ডিভিশনহীন)
ইকরামুল করিম চৌধুরী (ডিভিশনহীন)
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :