আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি একটি বিষণ্ন শিক্ষালয় প্রাঙ্গণে। এখানে আজ নেই কোনো শিশু-কণ্ঠের পাঠপাঠ, নেই প্রভাতী সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত। যেখানে একসময় ‘স্যার আসছেন’, ‘আজ ইংরেজি ক্লাস’—এমন উত্তেজনায় মুখর ছিল মাঠ-প্রাঙ্গণ, আজ সেখানে পড়ে আছে জুতো, ভিজে খাতা, ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাগ। কাদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ছোট্ট হাতের লেখা — কোনো কোমলমতি শিক্ষার্থীর ক্লাস টু-এর খাতা, হয়তো সেদিনই তার হাতেই লেখা হয়েছিল...
"আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা..."
…সেই বর্ষার জলই আজ হয়তো সে খাতার অক্ষরগুলোকে ধুয়ে দিচ্ছে — স্মৃতি ও স্বপ্নের মতো।
এই দৃশ্য কোনো সিনেমা নয়।
এটি বাস্তব — মাইলস্টোন প্রিপারেটরি স্কুলের প্রাঙ্গণ।
একটি দুর্ঘটনা, একটি বিস্ফোরণ, একটি অব্যবস্থাপনার ফলেই আজ স্কুলটি যেন মৃত্যুপুরী।
“সারাফ নামিয়া” নামে লেখা একটি সিলেবাস বই কাদার মধ্যে পড়ে আছে।
জানি না, নামিয়াটি এখন কেমন আছে। সে বেঁচে আছে কিনা, জানি না। তবে তার বইটি তার অপেক্ষায় পড়ে আছে — নিশ্চুপ, নিথর।
মানুষজন ভিড় করছে, ছবি তুলছে।
কিন্তু এইসব বই-খাতা, জুতো, ছেঁড়া জামা আর পুড়ে যাওয়া শ্রেণিকক্ষের দেয়ালগুলো কোনো শব্দ করছে না—
তবুও যেন কানে বাজে শিশুর কান্না, মায়ের আর্তনাদ, এক শিক্ষকের চিৎকার:
“ওদের বাঁচান!”
এ যেন শুধুই দুর্ঘটনা নয়, অবহেলার পরিণতি।
আমরা কি প্রস্তুত ছিলাম এমন দুর্যোগ মোকাবিলায়?
কোথায় ছিল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা?
স্কুলভবনের নিরাপত্তা কে দেখেছে?
এই প্রশ্নগুলো নতুন করে না তুললে,
আরও অনেক ‘নামিয়া’র খাতা হয়তো একদিন পড়বে কাদায় — আর আমরা দাঁড়িয়ে ছবি তুলব।
শিক্ষাঙ্গন শুধু পাঠের স্থান নয়, তা একজন শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি। সেই ভিত্তি যেন আর কখনো আগুনে পুড়ে ছাই না হয় — আমাদেরই তা নিশ্চিত করতে হবে।
কালের সমাজ/হাকা
আপনার মতামত লিখুন :