গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, দেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো `ক্রেডিটবাজিতে` মেতে উঠেছে। তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থান ছিল সাধারণ জনগণের, কোনো একক রাজনৈতিক দলের নয়।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আলরাজী কমপ্লেক্সে ‘জুলাই সনদ’ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নুর বলেন, “সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় এসেছে, ১৩৩ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না। কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ যারা আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, তাদেরও কোনো দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো সেই আন্দোলনের কৃতিত্ব নিজের নামে নিতে ব্যস্ত।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই আন্দোলনে ক’জন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান নিহত হয়েছেন? ইতিহাস সাক্ষী, সবসময় সাধারণ মানুষের রক্তেই এই দেশে পরিবর্তনের পথ তৈরি হয়েছে। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে অনেকেই আজ এমপি, উপদেষ্টা, এমনকি ‘নেতা’ হয়ে গেছেন।”
নুর অভিযোগ করে বলেন, “সরকারের ছত্রছায়ায় কিছু ব্যক্তি মাত্র ১০-১৫ দিনের আন্দোলনে ‘হিরো’ হয়ে গেছেন। অন্যদের ত্যাগ উপেক্ষা করে গড়ে তোলা হয়েছে ‘কিংস পার্টি’। এই দলটি তরুণ প্রজন্মকে বিপথে পরিচালিত করছে, রাজনীতিকে কলুষিত করছে।”
তিনি বলেন, “যে তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তারাই এখন চাঁদাবাজি, তদবির ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছে। যারা এই অবস্থা তৈরি করেছে, ইতিহাস তাদেরও বিচারের আওতায় আনবে।”
নুর বলেন, “আগামীতে যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষিত হবে, সেখানে যেন সবার ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটে। এটি যেন হয়ে ওঠে জাতির মুক্তির সনদ—সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগোতে হবে।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানান, “আলোচনার মাধ্যমে এই সনদকে আইনি ভিত্তি দিন। সব পক্ষকে সম্মান দিয়ে সত্য ইতিহাস জাতির সামনে উপস্থাপন করুন।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রশাসন একপক্ষকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দিচ্ছে, আর অন্য পক্ষ—যারা গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছে—তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয় না ডিসি বা ইউএনও অফিসে। এতে প্রমাণ হয়, এখনো প্রশাসনে নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়ে গেছে।”
নুর আরও বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম—নির্বাচনের নিরপেক্ষ রোডম্যাপ না থাকলে নানা ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দেবে। সরকার যদি শুধু একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য লোকদেখানো ব্যবস্থা নেয়, তবে তার পরিণতিও খারাপ হবে। ইতিহাসে যেমন দেখা গেছে খাইরুল হক বা নুরুল হুদাদের অবস্থা।”
নুরুল হক নুর বলেন, “আপনারা আমাদের রক্তের বিনিময়ে সেই পদে বসেছেন। এখন আপনাদের ছয় মাসের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা চোখ রাখব। যদি আস্থা রাখতে চাই, তবে আপনাদের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে হবে—আন্দোলনের অংশীজনদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।”
শেষে তিনি বলেন, “জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনের পথে এগোতে হবে। সরকারকে সেই দিকেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এগোতে হবে।”
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :