দেশ যখন নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে, ঠিক সেই সময় নির্বাচন আয়োজন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনের ময়দানে দুই শক্তির এমন দ্বন্দ্বে শঙ্কিত ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের আশঙ্কা, এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্য ভেঙে গেলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে এবং তার সুযোগ নিয়ে পুনরায় মাথাচাড়া দিতে পারে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব কমিয়ে এনে ঐক্য ধরে রাখার লক্ষ্যে নয়টি রাজনৈতিক দল উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বেরিয়ে এ মাসের মধ্যেই দুই দলের মধ্যে সমঝোতা সম্ভব হবে।
আলোচনার মূল তিন বিষয়
উদ্যোগী দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, আলোচনায় প্রাধান্য পাবে তিনটি বিষয়—
১. সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) চালু
২. জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া
৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট কমানো
ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল পিআর পদ্ধতি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। অপরদিকে বিএনপিও নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে হঠাৎ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ও অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আলোচনায় যুক্ত দলগুলো
এই উদ্যোগে অংশ নেওয়া নয়টি দল হলো—
গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয় দল: জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)
গণঅধিকার পরিষদ
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেলে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে এই দলগুলোর অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে। অন্যদিকে সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপির জাবেদ রাসিন ও এবি পার্টির সানী আবদুল হক।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর ইস্যুতে দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান নিরসন জরুরি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে চাই।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মনে করেন, “বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্বে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছি।”
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, দ্রুতই বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরামের সঙ্গেও বৈঠক হবে। এরপর বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
প্রেস ক্লাবে এবি শ্রমিক পার্টির সম্মেলনে মজিবুর রহমান মঞ্জু খোলাখুলিভাবে বলেন, “জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াত একজোট হয়ে এক মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিলে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। মাত্র কয়েক বছর আগেও তারা একই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। এবারও তা করা সম্ভব।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, “রাজনীতিতে নতুন জন্ম নেওয়া দলগুলো নিজেদের মধ্যে বিতর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দেশের অগ্রগতি থমকে আছে। তাই এখন সবচেয়ে জরুরি হলো জাতীয় ঐক্য।”
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :