ফেনীর সোনাগাজি ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় পরীক্ষার পর এবার সিরাজগঞ্জে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা নিশ্চিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে মেসার্স প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি দুটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধ এলাকায় শুরু হয় ২ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন। খরচ হয় প্রায় ৪২ কোটি টাকা। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলেই। কিন্তু স্থান পরিবর্তন, নির্বাচন ও করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে কাজ প্রায় পাঁচ বছর থেমে থাকে। চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি এসে কেন্দ্রটি উৎপাদনে যায়।
প্যান এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, ‘একটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালিত হলে ২০ থেকে ২৫ বছর কার্যকরভাবে চলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাতাসের গতি ভালো থাকে, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেশি হয়। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদাও থাকে বেশি।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ‘এ আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি মাত্র কক্ষ থেকেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। শিফটে একজনেই পরিচালনা সম্ভব।
ফজলুর রহমান জানান, দেশি প্রকৌশলীরা এখন অনেক যন্ত্রপাতি নিজেরাই তৈরি করতে পারছেন। এতে খরচ কমছে, বাড়ছে দক্ষতা।’ তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। সাত বছরে লোকসান হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।
ভবিষ্যতে দেশের উত্তরাঞ্চলে আরও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও পদ্মার তীরসহ বেশ কিছু এলাকায় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগে সম্ভাব্যতা যাচাই জরুরি।
এদিকে ফেনীর সোনাগাজির কেন্দ্রটি ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এখনো চুক্তি নবায়ন হয়নি। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার কেন্দ্রটিও বন্ধ। লবণাক্ত আবহাওয়ার উপযোগী প্রযুক্তি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কেন্দ্রটি সচল রাখা সম্ভব হয়নি। যদিও ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এটি আবার চালু করা সম্ভব’ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাপী বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের চিত্রও উজ্জ্বল। গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চীনে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার মেগাওয়াট। ভারতের উৎপাদন ৫০ হাজার ৪০ মেগাওয়াট। আর বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ২০২৩ সালের শেষে পৌঁছেছে ১১ লাখ ৪০ হাজার মেগাওয়াটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশেও বায়ুবিদ্যুৎ হতে পারে ভবিষ্যতের অন্যতম টেকসই বিদ্যুৎ উৎস।’ সমুদ্র উপকূলের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় নদ-নদীর তীরেও সাশ্রয়ী ব্যয়ে বায়ু টার্বাইন বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ তৈরি হয়েছে। এখন দরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :