ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করা: ট্রাম্প

কালের সমাজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করা: ট্রাম্প

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের সমঝোতায় যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষায়, “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর ইউক্রেন তা নয়।”

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আলাস্কায় এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়। তবে জেলেনস্কি সরাসরি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইতোমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা রয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধ থামাতে শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি প্রয়োজন। যুদ্ধবিরতি প্রায়ই টেকে না।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে পুতিনকে নিয়ে তিন পক্ষের বৈঠক আয়োজন করা হতে পারে।

অন্যদিকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে অনিচ্ছুক হওয়ায় স্থায়ী শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তবুও তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

এ বৈঠককে অনেকে তুলনা করছেন গত ফেব্রুয়ারির ঘটনার সঙ্গে, যখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে সমালোচনা করেছিলেন।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় মিত্ররা। তবে তারা ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল জানিয়েছেন, ইউরোপীয় নেতারাও সোমবারের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন শুরু করে এবং এখনো ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাতে হাজারো ইউক্রেনীয় নাগরিকসহ উভয় পক্ষের বহু মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন।

ট্রাম্পের অবস্থান অনেকাংশেই মিলে যাচ্ছে মস্কোর সরকারি বক্তব্যের সঙ্গে। পুতিন বরাবরই বলেছেন, সমাধান জটিল হবে কারণ দুই পক্ষের অবস্থান একেবারে বিপরীত। তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা আটকে দেওয়ার দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মূলত একমত হয়েছেন। তার মতে, “আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি, তবে ইউক্রেনকে এতে রাজি হতে হবে।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না ইউক্রেন। দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরগুলোকে তিনি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর ঢাল হিসেবে দেখছেন।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য। ট্রাম্প এ বিষয়ে “ইতিবাচক সংকেত” দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে পুতিনও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পক্ষে মত দিয়েছেন, যদিও তিনি এতে বিদেশি সেনা সম্পৃক্ত হওয়ার বিরোধিতা করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসা পুতিনের জন্য এটি বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। যদিও বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!