ঢাকা রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শ্রীবরদীতে কাচা রাস্তায় চরম দূর্ভোগ

কালের সমাজ সাফিজল হক তানভীর,শেরপুর মে ১৮, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম শ্রীবরদীতে কাচা রাস্তায় চরম দূর্ভোগ

শ্রীবরদীতে গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, এই একটি রাস্তাই তার প্রধান কারণ। বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে এই রাস্তায় চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।


কাঁচা রাস্তাটি শুরু হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রাম থেকে। এটি পশ্চিম মালাকোচা, হাতিবর, সিংগিজানী, টিলাপাড়া হয়ে সীমান্তবর্তী সড়ক সোনাঝুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।


মাঝখানে প্রায় ৪.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটি দিয়ে ৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় এসব মানুষের জীবনে দুর্ভোগ আর কষ্ট যেন শেষ হচ্ছে না।


শীতকালে কোনোভাবে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় কেবল পায়ে হেঁটে চলাচল সম্ভব হয়। বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান কাদায় উপজেলার চারটি গ্রামের মানুষ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাজার হাজার একর জমির ফসল এই রাস্তা দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে কৃষকরা সময়মতো তাদের পণ্য বাজারে পৌঁছে দিতে পারেন না, ফলে তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন।


আখ ও শাকসবজির বাগান থেকে উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় পাইকাররা আসেন না, যার ফলে কৃষকদের প্রায়ই বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়।


পুকুরের মাছ পরিবহনেও তীব্র ভোগান্তি হয়। যারা নিজের চোখে এই পরিস্থিতি দেখেননি, তাদের পক্ষে এই কষ্ট উপলব্ধি করা কঠিন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয় জরুরি রোগীদের ক্ষেত্রে। অন্তঃসত্ত্বা নারী, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীসহ অনেকেই কাদাপানিতে ভরা এই রাস্তায় শহরে পৌঁছাতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে তাঁদের স্বজনেরা এখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু এসব আর্তনাদ প্রশাসনের কানে পৌঁছায় না। সম্প্রতি সরেজমিনে রাস্তাটি ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।


তেতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সজিব মিয়া বলেন, এই রাস্তাটির কারণে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক জনপ্রতিনিধি আশ্বাস দিলেও কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এই রাস্তাটির জন্য আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। কৃষকরাও সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারে নিতে ভোগান্তিতে পড়ছে।


টিলাপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য সেলিম রেজা বলেন, পাহাড়ি এলাকা উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। তাঁদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কেউ এগিয়ে আসে না। আমি নিজে মাঝে মাঝে সামান্য পরিমাণে মাটি ও বালু ফেলে জনসাধারণের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করি, তবে তা খুবই সীমিত।"
তেতুলিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, "জন্মের পর থেকেই এই রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে আসছি। উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কেউ এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিদিনের জীবনে আমাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আমরা দ্রুত এই রাস্তাটির পাকা সংস্কার চাই।


হাতিবর গ্রামের গৃহিণী লাইলী বেগম বলেন, ধান কেটে মাচায় সংরক্ষণ করে রেখেছি, রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদা। ধানের ভালো দাম থাকলেও বিক্রি করতে পারছি না। শুকনো মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাতেই আমাদের লোকসান হয়। দেখার কেউ নেই। আমাদের দাবি, রাস্তাটি যেন দ্রুত পাকা করা হয়।


হাতিবর গ্রামের  সিফাত মিয়া জানান, "এই কাঁচা রাস্তায় বর্ষায় ধান, আখ, শাকসবজি ও ৩০-৩৫টি পুকুরের মাছ পরিবহনে প্রতি মণে অতিরিক্ত ৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। শুকনায় ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান চললেও বর্ষায় কোনো যানবাহন চলে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে, আমাদের দপ্তরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পূর্বে আগুনে পুড়ে যায়, তবে আমরা ইতোমধ্যে নতুন করে পরিকল্পনা করছি এবং রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উপরে মহলে পাঠাবো। তারা অনুমোদন দিলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।

 

কালের সমাজ / স. তা/ সাএ

 

 

Side banner