ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

সিরাজগঞ্জে অবৈধ শামুক নিধন: জীববৈচিত্র্যের হুমকি ও আইনি শূন্যতা

কালের সমাজ | জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম সিরাজগঞ্জে অবৈধ শামুক নিধন: জীববৈচিত্র্যের হুমকি ও আইনি শূন্যতা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা এবং তার আশপাশের বিলাঞ্চলে চলমান শামুক ও ঝিনুক নিধন এখন পরিবেশগত সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

কিন্তু এ বছর বর্ষার পানি দেরিতে নামার কারণে শামুক সংগ্রহের কাজ আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ৫০০ নৌকার সাহায্যে স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন ২০-২৫টি স্থানে অবৈধভাবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন দুই থেকে তিন টন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শামুক সংগ্রহকারীরা জানান, বর্ষার সময় তাদের চাষাবাদ বন্ধ থাকায় এ কাজ করে তারা দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই শামুকগুলো ক্রয় করে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের খামারের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছেন। চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয় বলে জানা যায়।

তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার বলেন, ‘২০১২ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এ আইন অমান্য করে চলছে শামুক নিধন। শামুক সংগ্রহের অপরাধে জেলসহ অর্থ দণ্ডের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক নিধন।’

জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শামুক ও ঝিনুক নিধনের ফলে জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শামুক ও ঝিনুক জলাশয়ের নোংরা পানি থেকে পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। এভাবে নিধন চলতে থাকলে স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না এবং জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান জানান, ‘শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটা হলে সচেতনা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইনের শূন্যতা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে শামুক ও ঝিনুক নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না। মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শামুক নিধন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় মৎস্য অধিদপ্তরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!