সিরাজগঞ্জের ছোনগাছা ইউনিয়ন মা ও শিশু কল্যাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওষুধ সংকটের কারণে গ্রামীণ এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট থেকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী চিকিৎসা সেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম সরকারের জ্বর ও প্রসব ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পর, সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মী শিউলি খাতুন ওষুধের অভাবে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শিউলি খাতুন জানান, "আমাদের এখানে এক মাস ধরে কোনো ওষুধ নেই। একটি কার্টুন ওষুধ ছিল, যা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।"
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ম অনুযায়ী চারজন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দুইজন কর্মরত আছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে তাদেরও সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাধারণত তিন মাস পরপর ওষুধ সরবরাহ করা হতো, কিন্তু বর্তমানে কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না, যা স্বাস্থ্যসেবায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এরফান আহমেদ জানান, "আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমস্যা রয়েছে।" জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমিন বলেন, "ছোনগাছা ইউনিয়ন দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।"
গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প খরচে এবং সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এই কেন্দ্রগুলির স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ওষুধ সংকটের কারণে সাধারণ মানুষকে উপজেলায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য সময় ও অর্থের অপচয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সিরাজগঞ্জের এই সংকটের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা গ্রামীণ জনগণের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারেন।
এই সংকট সমাধান না হলে গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। তাই, এই সংকটের সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :