ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই সনদে আপত্তি এনসিপি ও জামায়াতের

কালের সমাজ | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম জুলাই সনদে আপত্তি এনসিপি ও জামায়াতের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রণীত জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে পৌঁছেছে। তবে খসড়ার ভূমিকা ও উপসংহারে ভাষাগত কিছু শব্দ ও বাক্যগঠন নিয়ে আপত্তি তুলেছে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী। যদিও সুনির্দিষ্ট আপত্তির বিষয়গুলো এখনো জানানো হয়নি, আগামীকাল (বুধবার) কমিশনে লিখিতভাবে তা জমা দেওয়া হবে।

এদিন দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ বিরতির সময় বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন এনসিপি, জামায়াত, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি ও বিএলডিপির নেতৃবৃন্দ।

এনসিপির অবস্থান: "আইনি ভিত্তি ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়"
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, “যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা নির্বাচনের আগেই আইনগত ভিত্তি পেতে হবে। নয়তো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অসম্ভব।”
তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ছয়টি পদ্ধতির কথা বললেও আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ খসড়া প্রকাশ করেছে, যা এনসিপি ‍‍`একতরফা‍‍` বলে মনে করছে।

র‍্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে এনসিপি’র সমর্থনের কথা জানিয়ে রাসিন বলেন, বিচার বিভাগ থেকে আরও দুই সদস্য যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যা দলটি সমর্থন করেছে।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে বাধ্যতামূলক করা হলেও নতুন প্রস্তাবে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, বাছাই কমিটি একমত না হলে ‘র‍্যাংক চয়েস ভোটিং’-এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে এবং এই পদ্ধতিকে সংসদে পাঠানোর চেয়ে কার্যকর মনে করছে এনসিপি।

জামায়াতের আপত্তি: খসড়া অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “জুলাই সনদ একটি অসম্পূর্ণ ও কিছু অংশ বিপজ্জনক খসড়া। এটি যদি নমুনা হয়, তাহলে মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটি চূড়ান্ত হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

তাহের জানান, জামায়াত একটি পৃথক সনদের খসড়া তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা একমত হয়েছি, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিলেও বেশিরভাগ দল একমত।”

গণসংহতির প্রস্তাব: উচ্চকক্ষ ও বিচারপতির উপস্থিতি জরুরি
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, “জুলাই সনদের বহু বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, উচ্চকক্ষ ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।”

নতুন প্রস্তাবে দলটি বাছাই কমিটিতে বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধির যুক্তির দাবিও জানায়।

নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, সনদের ভূমিকার ভাষা ও শব্দে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন এবং আরও কিছু বিষয় যুক্ত হওয়া দরকার। এসব লিখিতভাবে জানানো হবে।

এবি পার্টির অবস্থান: ‍‍`ত্রয়োদশ সংশোধনী’র ধারাবাহিকতা দরকার
এবি পার্টির প্রধান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় না থাকলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।”
তিনি জানান, কমিশনের প্রস্তাবিত কাঠামো ত্রয়োদশ সংশোধনীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে এবং র‍্যাংক চয়েস ভোটিং একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।

বিএলডিপির আপত্তি: অকার্যকর দলের অংশগ্রহণ অনুচিত
বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “বাছাই কমিটি নাম সংগ্রহ করবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে, কিন্তু অনেক দলের কোনো কার্যক্রম নেই। তাই কেবল সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে নাম নেওয়ার দাবি জানাই।”

তিনি আরও বলেন, বাছাই কমিটির ৫ সদস্যের মধ্যে ৪ জনের একমত হওয়ার প্রস্তাব বাস্তবতায় অকার্যকর। ৩ জনের একমত হলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!