ঢাকা রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২

শেরপুরে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি, সেতু নির্মাণে কমবে ৮ কিলোমিটার পথ

কালের সমাজ সাফিজল হক তানভীর,শেরপুর সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:৩০ পিএম শেরপুরে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি, সেতু নির্মাণে কমবে ৮ কিলোমিটার পথ

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ বছরের পর বছর চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কের মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরে গভীর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে সিংগাবড়ুবা, গোবিন্দপুর, কুতুবপুর, হাসধরা, চেংগুত্তার ও বাঘহাতা গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ ভোগান্তি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার মাঝখানে পানির স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ—সবাইকে নিত্যদিন এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগী পরিবহন করতেও বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বর্ষায় রাস্তা ভেঙে কাদায় একাকার হয়ে যায়, শুকনো মৌসুমেও পানি না নামায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।

এলাকাবাসী জানান, জলাবদ্ধতার স্থানে যদি একটি সেতু নির্মাণ করা হয়, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাদের মতে, এ সেতুটি নির্মিত হলে রানীশিমুল ও সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ তৈরি হবে। এতে শুধু যাতায়াত সহজ হবে না, পাশাপাশি অন্তত আট কিলোমিটার পথ কমে আসবে। এতে সময়, শ্রম ও খরচ—তিন ক্ষেত্রেই উপকার পাবেন সাধারণ মানুষ। কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা, এমনকি জরুরি প্রয়োজনে রোগী পরিবহনও সহজ হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো: সুলাইমান বলেন,
আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার মধ্যে বসবাস করছি। বর্ষার সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। রাস্তার মাঝখানে পানি জমে থাকে, গরু-গাড়ি, রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গেলে আমাদের প্রচণ্ড কষ্ট পোহাতে হয়। অনেক সময় ঘুরে বিকল্প পথে যেতে হয়, এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি হয়। যদি এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়, তাহলে শুধু আমাদের গ্রামের মানুষই নয়, পাশের ইউনিয়নের লোকজনও উপকৃত হবে।

মো: বিল্লাল মুন্সি বলেন, আমাদের প্রধান জীবিকা কৃষি। ফসল উৎপাদনের পর বাজারে নিতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয় এই জলাবদ্ধতার কারণে। ধান, সবজি বা অন্যান্য পণ্য পরিবহন করতে গেলে গাড়ি মাঝপথে আটকে যায়। ফলে খরচ বেড়ে যায়, সময় নষ্ট হয় আর অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। সেতু হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে, আমরা দ্রুত বাজারে ফসল পৌঁছাতে পারব।”

আব্দুল হাকিম বলেন, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় স্কুলগামী বাচ্চাদের। প্রতিদিন কাদা-মাখা পথ পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় বর্ষায় রাস্তা এমন কাদা হয়ে যায় যে বাচ্চারা স্কুলেই যেতে পারে না। এতে তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা চাই সরকার দ্রুত সেতু নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করুক।”

মো: খলিলুর রহমান বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বারবার জানিয়েছি। প্রশাসনকেও অনুরোধ করেছি যাতে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অথচ এ সেতুটি হলে দুই ইউনিয়নের হাজারো মানুষ উপকৃত হতো। এটা শুধু যোগাযোগ নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত।”

হাফিজুর রহমান জানান, আমাদের এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে আছে। এখানে সেতু হলে রানীশিমুল ও সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—যাতায়াতের পথ অন্তত আট কিলোমিটার কমে যাবে। এতে সময়, শ্রম ও খরচ সাশ্রয় হবে। আমরা চাই সরকার এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধান করুক।”

বাদশা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভোট দিই, প্রতিবার আশ্বাসও পাই। কিন্তু বাস্তবে উন্নয়ন খুব কমই দেখি। এই সেতুর দাবি আমরা বহু বছর ধরে করে আসছি, কিন্তু কেউ এখনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের মনে হচ্ছে, যেন আমরা অবহেলিত এলাকা হয়ে গেছি। এবার আমরা চাই সরকার সত্যিকারের উদ্যোগ নিক, যাতে আমাদের এই দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষ হয়।
এলাকার সচেতন মহলও দীর্ঘদিন ধরে এ সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা মনে করেন, সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে সহজেই সমাধান সম্ভব।

 

কালের সমাজ/ শ.আ./ সাএ
 

Side banner
Link copied!