ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিচার বিভাগের পদ সৃজনে ক্ষমতা এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে

কালের সমাজ | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০২৫, ১০:০৩ এএম বিচার বিভাগের পদ সৃজনে ক্ষমতা এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে

বিচার বিভাগের বিচারিক ও প্রশাসনিক পদ সৃজনের ক্ষমতা এখন থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা-২০২৫’ জারির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি নতুন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ বিধিমালা জারি করা হয়।

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, বিচারিক পদ সৃজনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি ছাড়াও জনপ্রশাসন, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সদস্য হিসেবে থাকবেন। কমিটির সুপারিশই হবে চূড়ান্ত। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের ভিত্তিতে পদ সৃজনের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা হবে।

আগে বিচার বিভাগে কোনো পদ সৃজন করতে হলে তা জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক দপ্তরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এতে সময়ক্ষেপণ ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতো। নতুন বিধিমালায় সেই প্রক্রিয়া সহজ ও স্বতন্ত্রভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রশাসনের দ্বারস্থ না হয়েই স্থায়ীভাবে বিচারকের পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

বিধিমালাটি সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই রায়ে বিচার বিভাগকে প্রশাসনের কাছ থেকে পৃথক করে একটি স্বাধীন ও সম্মানজনক সার্ভিস হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, “তেল জলে যেমন মেশে না, তেমনি বিচার বিভাগকে প্রশাসনের সঙ্গে মেশানো যাবে না।”

এই রায়ের আলোকে নতুন বিধিমালায় বিচারিক ও প্রশাসনিক পদগুলোকে ‘ক্যাডার’ পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮১৯টি বিচারিক ও ১২০টি প্রশাসনিক পদকে ক্যাডার পদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এসব পদ রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে সৃজন করা হবে।

এছাড়া একই দিনে ‘আইন ও বিচার বিভাগে পদায়ন বিধিমালা-২০২৫’ শীর্ষক আরও একটি বিধিমালা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আইন ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হবে। বাকি ২৫ শতাংশ নিয়োগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে হলেও তাতে আইন ও বিচার বিভাগের সম্মতি প্রয়োজন হবে।

এই বিধিমালার ফলে বিচার বিভাগের সদস্যদের সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, সলিসিটর, অতিরিক্ত সচিব এমনকি সচিব পদেও নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. শাহজাহান সাজু বলেন, “বিচার বিভাগের পদ সৃজনের ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। এই বিধিমালা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বাড়াবে।”

বর্তমান মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, “বিচারিক পদ সৃজনের জন্য একটি স্থায়ী কমিটি গঠন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই বিধিমালা বিচার বিভাগীয় কাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করবে।”

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ‘প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগ নীতিমালা’ বাতিল করে উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই নতুন বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের স্বাতন্ত্র্য ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই বিধিমালা জারি করায় সংশ্লিষ্ট মহলে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

এই দুটি বিধিমালার মাধ্যমে বিচার বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি বিচার বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!