ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

৫ আগস্ট হোক মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন: তারেক রহমান

কালের সমাজ | নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৫, ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম ৫ আগস্ট হোক মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজ ও ভবিষ্যতের প্রতিটি ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবিক মানুষ গড়ার অঙ্গীকারের দিন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের’ প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেন, “২০২৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কিত ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমি বলেছিলাম— বিজয় তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন পরাজিতরাও নিরাপদ থাকে। সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আজও আমি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে অনুরোধ করছি, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, সহিংসতা বা নারী নির্যাতনে জড়িয়ে না পড়ে। অন্যের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে মায়ের চোখে সন্তানরা যেমন নিরাপদ থাকে, তেমনই সব নাগরিক— দলমত, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস নির্বিশেষে— নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”

তারেক রহমান ৫ আগস্টকে বিজয়ের দিন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এক বছর আগে এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আজকের দিনটি তাই শুধু আনন্দ নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়ও বয়ে এনেছে।”

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একুশ শতকে পলাতক স্বৈরাচার বাংলাদেশে গুম, খুন, নির্যাতনকে স্বাভাবিক করে তুলেছিল। ‘আয়নাঘর’ নামে শত শত গোপন বন্দিশালায় মানুষকে আটকে রাখা হতো। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেকে আজও নিখোঁজ।”

অর্থনীতির কথা টেনে তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি ছিল দৈনন্দিন চিত্র। দেশের অর্থনীতিতে ব্যক্তিতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।”

তারেক রহমান বলেন, “১৯৭১ সালে ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সালে ছিল সেই স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১-এর শহীদদের মতোই ২৪-এর শহীদদের জাতি কখনো ভুলবে না।”

তিনি জানান, একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। এই সরকারের সঙ্গে বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট শাসনের কোনো তুলনা চলে না।

“হিটলারের নাৎসিবাদ যেমন গর্বের বিষয় হতে পারে না, তেমনি পলাতক ফ্যাসিস্টদের শাসনকাল নিয়েও গর্ব করার কিছু নেই,” বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনায় শুধু সরকার নয়, বিচার বিভাগ, সংসদ এবং ধর্মীয় নেতারাও পালিয়েছে। এমন নজির বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই ফ্যাসিস্ট চক্রের মধ্যে এখনও কোনো অনুশোচনা নেই।”

তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য আজ দৃঢ়। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। গণতন্ত্র হত্যা বা বাংলাদেশকে পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।”

তিনি রাজনৈতিক ভিন্নমতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ভিন্নমত যেন ফ্যাসিবাদ বা চরমপন্থার পুনরুত্থানে সহায়ক না হয়— সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

তারেক রহমান বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে নিজেদের কর্মসূচি ও এজেন্ডা নিয়ে। কোন দলকে গ্রহণ করা হবে, তা নির্ধারণ করবেন জনগণ। এর মাধ্যমেই জনগণকে শক্তিশালী করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব ছাড়া রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে প্রকৃত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সব স্তরে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

বক্তব্যের শেষভাগে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই একটি টেকসই এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। আসুন, আমরা সেই পথেই অগ্রসর হই।”

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!