জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন হাতে নিয়েছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ, প্রান্তিক পর্যায়ে গণশুনানি। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো এ ব্যতিক্রমী আয়োজন। উদ্যোগটি গ্রহণ করে উপজেলা প্রশাসন, সীতাকুণ্ড।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭৫টিতে বর্তমানে নেই কোনো জনপ্রতিনিধি, পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসকদের মাধ্যমে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সরাসরি ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সমস্যার কথা শোনা এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি শুধু প্রশাসনিক সেবা প্রদান নয়, বরং জনগণের আস্থা অর্জনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
দিনব্যাপী গণশুনানিতে সলিমপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ভূমি জটিলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণসহ নানা সমস্যা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মনোযোগ সহকারে সেগুলো শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো নিষ্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। জটিল সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও জানান।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক প্রতি বুধবার কার্যালয়ে গণশুনানি করে থাকেন। তবে এবার মাঠপর্যায়ে এ কার্যক্রম নিয়ে গিয়ে জনগণকে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গণশুনানিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “জনগণের সমস্যা সমাধান করাই প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। মানুষকে সেবা নিতে দৌড়াতে হবে না, প্রশাসন তাদের দোরগোড়ায় যাবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা বাড়াবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি জারুল গাছের চারা রোপণ করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
আয়োজনের অংশ হিসেবে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জেলে পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক।
গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষ উদ্যোগটিকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন। তারা জানান, আগে সমস্যার সমাধানে দফতরে দফতরে ঘুরতে হতো, এখন জেলা প্রশাসক নিজে এসে কথা শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন—এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।
সলিমপুর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত এ গণশুনানি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জনগণের প্রত্যাশা পূরণের বাস্তব পদক্ষেপ। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সুশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
কালের সমাজ/আ. সা/ সাএ
আপনার মতামত লিখুন :