বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমানত ফেরত দিতে অক্ষমতা, ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়া এবং মূলধনের ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যত অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল করে অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজুলেশন বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
অবসায়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি বর্তমানে কর্মরত কর্মীরা চাকরিবিধি অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের বিশাল অংশই খেলাপি।
পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ, লোকসান চার হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ, লোকসান তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৭৫ শতাংশ, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা। জিএসপি ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৫৯ শতাংশ, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সমস্যাগ্রস্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা খেলাপি। খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৮৩ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে ভালো অবস্থায় থাকা ১৫ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৭.৩১ শতাংশ। তারা গত বছর ১,৪৬৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬,১৮৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ৪৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ২০ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকার আমানত। শুধু ব্যক্তিগত গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণই প্রায় ৪,৯৭১ কোটি টাকা।
কালের সমাজ/এ.স/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :