সরকারের রাজস্ব প্রশাসনে কাঠামোগত বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এ লক্ষ্যে পৃথকভাবে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে জারি করা হয়েছে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’।
অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ দফা আলোচনার পর কিছু ধারা সংশোধন করে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা উপকমিটি অনুমোদন দিয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব
সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একটি মন্ত্রণালয়কে একাধিক বিভাগে ভাগ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে, যা নীতির কার্যকারিতা ও তদারকি করবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (অর্থ: শুল্ক ও আবগারি) বিধিমালা, ১৯৮০ অনুসারে নতুন বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন করা হবে।
সরকারি সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক হবে; প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নতুন কাঠামোয় অর্থ ক্যাডার থেকে দুই সচিব নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
বিলুপ্ত হচ্ছে এনবিআর
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। গত ১২ মে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সরকার জানায়, এ সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আহরণকে পৃথক করা, দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থ সংঘাত হ্রাস এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ।
কেন এই পরিবর্তন
গত ৫০ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বৈশ্বিক গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১১.৬ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য এটি অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করা।
বিদ্যমান কাঠামোয় কর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকায়—
নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্বার্থসংঘাত তৈরি হয়।
কর আদায়কারীরা জবাবদিহির বাইরে থাকেন।
কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
কর্মদক্ষতা যাচাইয়ের কোনো বস্তুনিষ্ঠ সূচক নেই।
ব্যবসায়ীদের মত
ব্যবসায়ী মহলের দাবি, করজালের আওতা সীমিত হওয়ায় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ছে না। স্বতন্ত্র নীতি বিভাগ থাকলে নীতি হবে বৈজ্ঞানিক ও তথ্যভিত্তিক, যা মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে সহায়ক হবে। তবে এ জন্য জনবল উন্নয়ন জরুরি।
সরকারের প্রত্যাশা
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন কাঠামো কার্যকর হলে—
সরকারি সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহার আরও দক্ষ হবে,
অনিয়ম ও অপচয় কমবে,
আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত হবে,
এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :