সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্ধারিত স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা বলেন, রাতের আঁধারে চলছে বালু লুটপাট—এ যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ থেকে শিক্ষার্থীরা হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মিছিল শুরু করে। স্লোগানে মুখরিত মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মুখে ছিল প্রতিবাদের ভাষা—“অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করো”, “বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও, ষড়যন্ত্র রুখো।”
শিক্ষার্থীরা জানান, একটি অসাধু চক্র গভীর রাতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছে। এতে শুধু ক্যাম্পাসের নির্ধারিত জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, আশপাশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। তাদের দাবি, এ ঘটনা মোটেও আকস্মিক নয়; এটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পকে ঘিরে দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের অংশ।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা নতুন প্রজন্ম, আমাদের ভবিষ্যৎ এখানে গড়ে উঠবে। অথচ একটি চক্র নিজেদের স্বার্থে সব ধ্বংস করতে চাইছে। আমরা বসে থাকব না।”
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। একই সঙ্গে শাহজাদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও পৃথকভাবে ইউএনওকে অবহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে জরুরি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি সুরক্ষায় তারা আইনগতভাবে সবধরনের পদক্ষেপ নেবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দায়ীদের গ্রেফতার না করলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রয়োজনে রাজপথেই আন্দোলন চালিয়ে যাব,”—এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
স্থানীয় অনেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নদী ও চর এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও প্রভাবশালী চক্রের কারণে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকে ঘিরে যেমন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, তেমনি চলছে নানা টানাপোড়েন। অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কেবল পরিবেশ রক্ষাই নয়, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :