সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা উপজেলার বেতুয়া উত্তরপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বসতবাড়ির একমাত্র চলাচলের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে তিন পরিবারের পাশাপাশি আশপাশের আরও ২৩টি পরিবার কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ঘটনায় গ্রামে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মৃত আছের আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও তার ভাইদের বাড়ির সামনে দিয়ে একটি মাত্র পথ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা ওই পথ ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা হঠাৎ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে সেই পথ বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, বাড়ির চারপাশ ঘিরেও বেড়া দেওয়া হয়েছে। এতে বাজার করা, চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া কিংবা শিশুদের স্কুলে যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের চলাচলের একমাত্র পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আমরা যেন খাঁচায় বন্দি হয়ে গেছি। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছি না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না—এভাবে কতদিন চলবে
অভিযুক্ত ওমর ফারুক অবশ্য নিজের দায় অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, বেলাল হোসেন ও তার পরিবার আগে তাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে যাতায়াত করলেও বর্তমানে নিরাপত্তার স্বার্থে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জমি নিয়ে বিরোধও রয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিষয়টি কেবল ব্যক্তিগত পথ নয়, জমির মালিকানা নিয়েও দ্বন্দ্ব জড়িত।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁশের বেড়া সরিয়ে চলাচলের পথ উন্মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পরও বিরোধের মীমাংসা হয়নি। তারা আশঙ্কা করছেন, এভাবে পুনরায় পথ বন্ধ হয়ে গেলে আবারও একই সমস্যার মুখে পড়তে হবে।
এ ঘটনার কারণে শুধু বেলাল হোসেনের পরিবারই নয়, আশপাশের আরও ২৩টি পরিবার প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গ্রামের অনেকেই বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল কুদ্দুস জানান, “একটা গ্রামের মধ্যে যদি চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তো জীবন-জীবিকাই থেমে যাবে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করুক।
গ্রামীণ সমাজে জমি নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে চলাচলের একমাত্র পথ বন্ধ করে পুরো ২৬টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা শুধু আইনগত সমস্যা নয়, মানবিক দিক থেকেও অমানবিক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাময়িক সমাধান এলেও স্থায়ীভাবে এ বিরোধের মীমাংসা না হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখকষ্ট চলতেই থাকবে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :