বান্দরবান জেলার লামায় কলা চাষ শুধু আয়ের উৎস নয়, বরং পাহাড়ি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার নাম হয়ে উঠেছে। দুর্গম পাহাড়ি পথে চাষিরা উৎপাদিত কলা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, এমনকি ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন অক্লান্ত পরিশ্রমে।
চাষিরা জানান, পাহাড়ি মাটিতে পুরো বছরই কলা উৎপাদন হয়, তবে বর্ষা মৌসুমে ফলন সর্বাধিক। লামায় প্রধানত বাংলা কলা ও চম্পা কলার আবাদ হলেও চাপা সরবি ও সাগর কলাও উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদিত হচ্ছে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে সবচেয়ে বেশি কলা আসে। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা—নাইক্ষ্যং, চিকনঝিরি, টিয়ারঝরি—থেকে প্রতিদিনই চাষিরা কলা বাজারে নিয়ে আসেন।
তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের নামে নেওয়া টোল খরচ। একজন চাষি জানান, প্রতিটি ছড়ায় ৪ টাকা করে টোল দিতে হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও ছড়াপিছু ৫ টাকা দিতে হয়। ফলে প্রতি ছড়ায় মোট খরচ দাঁড়ায় ৯–১০ টাকা।
লামা বাজার ও রুপসীপাড়া বাজারে সপ্তাহে দুই দিন—শনিবার ও মঙ্গলবার—কলার হাট বসে। এখান থেকেই ট্রাক ও পিকআপে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয় কলা। স্থানীয় কৃষি অফিসার মো. আশরাফুজ্জামান সোহেল জানান, “লামা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনশীল এলাকা। এখানকার কলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে। তবে এখনও সরকারি প্রণোদনা নেই, শুধু পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে।”
চাষিরা জানান, পাহাড়ি কলা কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া উৎপাদিত হওয়ায় স্বাদ, গুণমান ও স্থায়িত্ব সমতলের তুলনায় অনেক ভালো। চাষিরা দাবি করছেন—টোল খরচ কমানো, রাস্তা নির্মাণ ও প্রণোদনায় সহায়তা প্রদান করলে লামার পাহাড়ি কলা আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :