সিরাজগঞ্জের একডালা ও খাটিয়ামারা গ্রামের মানুষের জীবন এখন ঝুঁকির উপর দাঁড়িয়ে। দুই গ্রামের সংযোগের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শিশু, কৃষক, রোগী, শ্রমিক থেকে শুরু করে সিএনজি অটোরিকশা ও ভ্যান—সবাই বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন। তবে প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে ভয়, কারণ যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে সাঁকোটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। কেউ সাঁকো থেকে পিছলে পড়ে আহত হচ্ছেন, আবার কারও মালভর্তি ভ্যান বা অটোরিকশা উল্টে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একজন বৃদ্ধা পথচারী কাঁদো কণ্ঠে বললেন, “হাসপাতালে যাওয়ার পথে সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আমি মারাত্মক আঘাত পাইছিলাম। তারপরও আর কোনো উপায় নাই, আবারও এই সাঁকো দিয়েই চলতে হয়।”
স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকরাও ভয় আর উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন প্রতিদিন। এক অভিভাবক বললেন, “ছেলেমেয়েরা পড়তে যায় ভয় নিয়ে। যদি সাঁকো থেকে পড়ে যায়, তখন আমরা কই যাব?”
এখানেই শেষ নয়, ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের পাশাপাশি স্থানীয়দের দিতে হচ্ছে চাঁদা। জানা গেছে, পথচারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা, আর সিএনজি, অটোরিকশা ও ভ্যানের কাছ থেকে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা ওঠানো হয় আব্দুল বারিক ও আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে। তাদের কাছে টাকা উত্তোলনের বৈধতা জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দিতে চাননি।
গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান আক্ষেপ করে বললেন, “ফসল নিয়ে বাজারে যাইতে গিয়েও ১০ টাকা দিতে হয়। আবার সাঁকো পার হইতে গিয়ে গরুর গাড়ি একদিন উল্টা গেছে। এভাবে আর কতদিন চলবো?”
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হোক। তবেই এই ভোগান্তি ও ঝুঁকি থেকে মুক্তি মিলবে। “আমরা চাই সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক। মানুষ তো আর চাঁদা দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে বাঁচতে চায় না।”—বললেন গ্রামের আরেকজন যুবক।
একডালা ও খাটিয়ামারা গ্রামের মানুষের স্বপ্ন, একদিন একটি পাকা ব্রিজ হবে, আর সেই ব্রিজ দিয়ে বিনা ভয়ে, বিনা চাঁদায় হাঁটবে তাদের শিশুরা, নিরাপদে আসবে যাবে রিকশা-ভ্যান, রোগী পৌঁছাবে হাসপাতালে।
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :