নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিমূলক করার লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন সংক্রান্ত একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্কারে একক প্রার্থীকে সরাসরি বিজয়ী ঘোষণা না করে ‘না ভোট’-এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত সংস্কার অনুযায়ী:
আদালত কর্তৃক ফেরারি ঘোষণা প্রাপ্ত ব্যক্তি আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
প্রার্থী যদি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন বা তথ্য গোপন করেন, কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। নির্বাচিত হওয়ার পরও বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্যের পদ বাতিল করা হবে।
ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে; তিনি চাইলে ভোটগ্রহণ স্থগিত বা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাবে না; তাকে ‘না ভোট’-এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ‘না ভোট’-এর চেয়ে কম হয়, পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হবে। দ্বিতীয়বারও একই প্রার্থী থাকলে পুনর্নির্বাচন হবে না।
নির্বাচনী এজেন্ট হতে হলে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিটি দলীয় প্রার্থীকে নিজস্ব প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
রিটার্নিং অফিসারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা চাইলে একটি কেন্দ্র, একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন ও ফলাফল স্থগিত করতে পারবেন।
ইভিএম ব্যবহার বাতিল করে পোস্টাল ব্যালট চালু করা হয়েছে। প্রবাসী ভোটার, সরকারি কাজে বাইরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এবং কারাগারে থাকা ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
ভোটগণনার সময় সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারবেন, তবে প্রার্থী, এজেন্ট বা রাজনৈতিক নেতা প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না।
নির্বাচনী ব্যয় সীমা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রার্থী প্রতি ভোটারের জন্য ১০ টাকা বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ, যা বেশি হবে সেই অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবে।
প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
নির্বাচনী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না।
সানাউল্লাহ বলেন, “এসব সংশোধনী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও জনগণের আস্থা অর্জনযোগ্য করবে। আশা করি, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত অনুমোদন দেবে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হবে।”
কালের সমাজ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :