ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা

কালের সমাজ | নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১০:২৭ এএম জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা

জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫ চূড়ান্তকরণের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে সাত দফার ভিত্তিতে প্রণীত খসড়া দলগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে এবং আজ শনিবারের মধ্যে প্রতিটি দলকে দুইজন নেতার নাম জানাতে বলা হয়েছে, যারা সনদে স্বাক্ষর করবেন। তবে সনদ ঘোষণার চেয়ে বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ নিয়েই এখন বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়টিকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫-এর চূড়ান্ত ভাষ্যে সব মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনার পরও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ কাটেনি। দলগুলো অভিযোগ করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার কারণেই এই সংকট গভীর হচ্ছে।

এর আগে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর কমিশন দলগুলোকে খসড়া সনদ সরবরাহ করে। ২৯টি দল লিখিতভাবে মতামত পাঠায় এবং বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে কমিশন দুটি বৈঠকও করে। তবুও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এই তিন দলের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবায়ন প্রস্তাবের কারণে সমঝোতা হয়নি। বিএনপি চায় সংসদ গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে সংস্কার কার্যকর করা হোক। বিপরীতে জামায়াত রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচন আগেই বাস্তবায়নের দাবি জানায়। আর এনসিপি নতুন গণপরিষদ গঠনের পক্ষে।

বিভিন্ন প্রস্তাব আলোচনায়

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ছয়টি সুপারিশ উঠে এসেছে:

  • গণভোট

  • রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ

  • গণপরিষদ গঠন

  • নতুন সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন

  • সংসদকে সংস্কার সভায় রূপান্তর

  • সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া

  • বিশেষজ্ঞরা মূলত চারটি পথের ওপর জোর দিয়েছেন: অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।

  • রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান

বিএনপি মনে করছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই সংস্কার শুধুমাত্র নতুন সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায় দেশে দুটি সংবিধান কার্যকর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “সংবিধান পরিবর্তনের এখতিয়ার কারও নেই। এখনই বাস্তবায়ন করা হলে আদালতে এটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি মনে করছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি তৈরি করতেই হবে এবং তা নির্বাচন আগেই করতে হবে। জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সংস্কার যদি সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি অবিচার হবে।”

এনসিপির আখতার হোসেনের মতে, নতুন সংবিধান প্রণয়নই একমাত্র কার্যকর পথ। তিনি বলেন, “পুরোনো সংবিধানে সামান্য ঘষামাজা করে টেকসই সংস্কার সম্ভব নয়।”

বাংলাদেশ এলডিপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও আরও কয়েকটি দল গণভোট, রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্স বা সংসদের মাধ্যমে আইনসম্মত ও টেকসই বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মত

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মো. সাহাবুল হক মনে করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন যদি আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে না আনা যায়, তবে এটি ইতিহাসের ব্যর্থ দলিলে পরিণত হবে। তার মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের এখনই দায়িত্ব—কথায় নয়, কাজে দেখানো।

কালের সমাজ//র.ন

Side banner
Link copied!